ছাপা 

আলবার্টা, কানাডা (১৬, এপ্রিল ): কানাডায় বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। কানাডায় প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডু পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপনকারীদের উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বাংলা নববর্ষকে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে মিলিত হবার অপূর্ব সুযোগ আখ্যা দিয়ে একে কানাডীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে উল্লেখ করেন.

তিনি বহুমাত্রিক সমাজ গড়ায় বাঙ্গালী কানাডিয়ানদের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার মাধ্যমে প্রেরিত এক বার্তায় তিনি এ শুভেচ্ছা জানান।

 

এবার এডমন্টনে শুধু বর্ণাঢ্য আয়োজনে নববর্ষ উদযাপন নয় বরং এর সাথে সাথে একে ঐতিহাসিক ও ব্যতিক্রমি করে তোলা হয়েছে। এডমন্টন পাবলিক লাইব্রেরী প্রাঙ্গনে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙ্গালির সর্বজনীন এ উৎসব প্রথমবারের মতো রাত ১২:০০ টায় শিখা প্রজ্জলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়. পহেলাবৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ ১৪২৪কে স্বাগত জানান বাংলাদেশ  প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টার সভাপতি, বাংলাদেশ  মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট নির্বাহী দেলোয়ার জাহিদ ।

বাংলাদেশের সার্বজনীন এ উৎসবে পহেলা বৈশাখের শেষ প্রহরে তথা নতুন সূর্যোদয়কে উদয়ের আহ্বান জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর এ নতুন উদ্যোগ, বর্ষবরণের উৎসব আমেজে মুখরিত এডমন্টন সহ প্রবাসে বসবাসরত গোটা বাঙ্গালী সম্প্রদায়।

অনুষ্ঠানে কটি স্থানীয় সংগঠনের পুরুষ ও নারী নেতৃবৃন্দ সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা সভাপতি মাসুদ ভুইয়া, সহসভাপতি ফয়সল ভুইয়া, রুহুল আমিন, ম সাঈদ, কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলী, মহিউদ্দিন, ফারজানা কাদের, চাদনী লস্কর এবং এমজেএমএফ বাংলাদেশ স্পোর্ট্স ক্লাব অব আলবার্টা সভাপতি আহসান উল্লাহ, তানভীর হাসান, সোনিয়া ইসলাম, আসমা আক্তার, রায়হানা রাসমিন, এলমা জাহিদ, সোহা ইসলাম, ম সালাউদ্দিন প্রমুখ সহ শিশু কিশোরেরা অংশ নেয়। প্রচন্ড শীত, বৃষ্টি আর তীব্র হাওয়া উপেক্ষা করে বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের নিবেদিত প্রান কিছু পরিবার এডমন্টন ইষ্ট এর পাবলিক লাইব্রেরী প্রাঙ্গনে জড়ো হন চৈত্রকে বিদায় জানাতে।

বাঙালির এই প্রাণের উৎসব ও ব্যতিক্রমি আয়োজনকে ঘিরে এডমন্টন নর্থ এলাকার পুরোটাই ঢেকে দেয়া হয়েছিলো নিরাপত্তা চাদরে। বৈরী আবহাওয়ার কারনে মঙ্গলশোভা যাত্রা স্থগিত ঘোষনা করেন প্রেসক্লাব সভাপতি।

এশিয়ান নিউজ ও ভিউজ এর প্রকাশক সাইফুর হাসান ব্যবস্থাপনা ও সাজসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন।

আলবার্টা পার্লাম্যান্টে বাংলা নববর্ষকে ঐতিহাসিক স্বীকৃতি

 

গত ৪ঠা, এপ্রিল, আলবার্টা পার্লাম্যান্টে নিউ ডেমোক্র্যাট ককাস এর সহযোগিতায় বাংলা নববর্ষকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রাদেশিক পরিষদে একটি বিল উত্থাপিত হয়। সণ্মানিত ডেনিস ওলার্ড, এমএলএ তা সংসদে উত্থাপন করেন। বিপুল করতালির মাধ্যমে একে স্বাগত জানান সন্মানিত আইন প্রনেতাগণ।

 মাননীয় স্পিকার রবার্ট ই ওয়ানার বাংলা নববর্ষকে নিয়ে হাউজের গভীর আগ্রহের কথা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেন।

অধিবেশনের শুরুতে বাংলাদেশ  প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টার সভাপতি, বাংলাদেশ  মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট নির্বাহী দেলোয়ার জাহিদ, বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব এডমন্টন প্রতিনিধি এডভোকেট আরিফ খান, বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা সভাপতি মাসুদ ভুইয়া, এমজেএমএফ বাংলাদেশ স্পোর্ট্স ক্লাব অব আলবার্টা, বাংলাদেশ হেরিটেজ মিউজিয়াম সহ-সভাপতি আনামুর রহমান, এশিয়া নিউজ ও ভিউজ প্রকাশক সাইফুর হাসান, জুলফিকার আহমেদ, ক্যালগেরীর এনডিপি নেতা বিনয় দে, বঙ্গ সোসাইটির তাপস হাওলাদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দকে হাউজে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে বিশেষভাবে সন্মানিত করা হয়।

আলবার্টা পার্লাম্যান্টের অধিবেশন ও অতিথি গ্যালারী কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো। 

বাংলাদেশ  প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা সভাপতি দেলোয়ার জাহিদের আহবানে সাড়া দিয়ে নিউ ডেমোক্র্যাট ককাস বাংলা নববর্ষকে স্বীকৃতি দেয়ার এ উদ্যোগ নেয়। অধিবেশনের পূর্বে মাননীয় ইরফান সাবির কমিউনিটি এবং সমাজ সেবা মন্ত্রী উপস্থিত বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দের সন্মানে একটি মধ্যান্যভোজ সভার আয়োজন করেন।

উদ্ভোধনী ভাষনে মন্ত্রী সাবির বলেন বহু সংস্কৃতির দেশ কানাডায় বাংলা নববর্ষকে স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। আজ একটি ঐতিহাসিক দিন যা চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে।

মন্ত্রীর উদ্ভোধনী ভাষনের পর ঐতিহাসিক এই গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঘটনা ও বাংলা নববর্ষকে প্রবাসে স্বীকৃতির প্রথম প্রয়াসের উপর সারগর্ভ আলোচনা করেন বাংলাদেশ  প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টার সভাপতি দেলোয়ার জাহিদ.

দেলোয়ার জাহিদ তার ভাষনে আলবার্টা পার্লাম্যান্টে বাংলা নববর্ষের প্রস্তাবিত বিলটি আজকে উত্থাপনের সুযোগ সৃষ্টির পিছনে অভিবাসী সকল জৈষ্ঠ্য নাগরিকদের অতীত অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি জনাব সিদ্দিক হোসেন, মিসেস শাহানা হোসেন, প্রফেসর ড এম এ মান্নান (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য), ডঃ এনসি দাস, জনাব নেহাল উদ্দিন, ডাঃ আলী সহ সকলের অবদানের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব এডমন্টন,বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা ষ্টুডনেন্টস্ এসোসিয়েশন, এডমন্টন শহরের এমজেএমএফ বাংলাদেশ স্পোর্টস ক্লাব, বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব কালগেরী ও ফোর্ট ম্যাকমেরীর অতীত এবং বর্তমান কর্তাদের সেবামূলক কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

তিনি আলবার্টা ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও ব্যবসা বানিজ্য বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ এশিয়ায় উন্নয়নের একটি রোল মডেল উল্লেখ করে তাকে অধিকতর সহযোগিতার আহ্বান জানান।

ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে অন্যানের মাঝে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট আরিফ খান, মাসুদ ভুইয়া, আনামুর রহমান, বিনয় দে, তাপস হাওলাদার প্রমুখ। একটি ভিন্নমাত্রার উদ্দিপনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রানঢালা উচ্ছাস নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু বাঙ্গালী,  ক্যালগেরী, ফোর্ট ম্যাকমেরী ও অন্যান্য শহর থেকে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সহ আগ্রহীরা এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। 

‘বাংলা নববর্ষ’ উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানাতে আলবার্টা প্রিমিয়ার ভোজসভার ফটো সেসনে অংশ নেন।

ছবিতেঃ এডমন্টনে বর্ষবরণে বাঙ্গালী কমিউনিটি এবং আলবার্টা প্রিমিয়ার এর শুভেচ্ছা বিনিময় প্রেসক্লাব সভাপতি ও আগত অতিথিদের সাথে। পার্লাম্যান্টে বাংলা নববর্ষকে স্বীকৃতি দানের পূর্বে... 

নববর্ষে বিসিএই এর সভাপতি ম. লস্কর জনাব তাহেরকে আজীবন সন্মাননা পদক তুলে দিচ্ছেন

বর্ষবরণ উৎসব ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব এডমন্টন। দুইদিন ব্যাপী নাচ, গান ও কবিতায় নতুন বছরকে স্বাগত জানায় জনপ্রিয় শিল্পীরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ার কারণে শত শত নারী পুরুষ এ অনুষ্ঠানে ভিড় জমান। পয়লা বৈশাখের এ আয়োজন ছিল খুবই সাজানো-গোছালো.